শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীনতা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু’র দীর্ঘ সংগ্রাম আর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, আমাদের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন আর বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১, এসবই এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা।

১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের ভয়াল রাতের পর আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি তাজউদ্দীন আহমেদ ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামকে নিয়ে ২৭ মার্চ প্রথমে ঝিনাইদহ যান। মার্চের ৩০ তারিখে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিলি­তে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমেদ ভারতে অবস্থান গ্রহণকারী এমএনএ এবং এমপি এদের নিয়ে একটি গোপন স্থানে অধিবেশন আহবান করেন। এরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তাঁদের ঐ অধিবেশনের আইনগত ভিত্তি ছিল। এরাই গণপরিষদ গঠন করেণ এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঐ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ এবং সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। অধিবেশনে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যও নিযুক্ত করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঐ দিনই (১০ এপ্রিল) তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। এভাবে ১০ এপ্রিল সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এদিনই মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হয় এবং এরপর প্রতিদিনই তারা সভায় মিলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বিশ্ববাসীকে অবহিত করেণ। মন্ত্রিসভার সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় শত শত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এবং উপস্থিত জনগণের সামনে মন্ত্রী হিসেবে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন। সেদিনের সেই ঘোষণা পত্রই বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র। ১১ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে চুয়াডাঙ্গায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা ১৪ এপিল প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ করবেন। এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী চুয়াডাঙ্গায় প্রবল বোমাবর্ষণ করে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চুয়াডাঙ্গার পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথ তলায় বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেবে। অন্যান্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ তৈরি, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরিসহ শপথ গ্রহণের স্থান গোপন রেখে সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে সবই ঠিক ঠিক সম্পন্ন করেছিলেন বাংলাদেশের অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিকরা। যার ধারাবাহিকতায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। সেদিন ছিল শনিবার। সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথ তলা গ্রামের আমবাগানের চারদিকে রাইফেল হাতে কড়া পাহারায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হাজার হাজার মুক্তিকামী বাঙালির উপচে পড়া ভিড় চারদিকে। ঐতিহাসিক স্বাধীনতার মুহূর্তটি ধারণ করতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও প্রস্তুত। মুক্ত আকাশের নিচে চৌকি পেতে তৈরি করা হয়েছে শপথ মঞ্চ। মঞ্চের ওপর সাজানো ৬টি চেয়ার। অনুষ্ঠানের প্রবেশ পথে বাংলায় লেখা ‘স্বাগতম’। স্থানীয় সময় ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের নেতারা একে একে আসতে থাকেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রকম্পিত চারদিক। প্রথম শপথ মঞ্চে উঠে এলেন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাঁর পেছনে তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান ও জেনারেল এম এ জি ওসমানী।

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসটি বাঙালি জাতির জীবনের একটি ঐতিহাসিক দিন, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই সরকারই বাংলাদেশের প্রথম কার্যকরী সরকার। এই সরকার গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাস সব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিচালনা করেছে দীর্ঘ নয় মাসের বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সব কর্মকান্ডের যোগসূত্র হচ্ছে মুজিবনগরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।