শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

যেভাবে বাদী থেকে প্রধান আসামি হলেন বাবুল আক্তার
যেভাবে বাদী থেকে প্রধান আসামি হলেন বাবুল আক্তার

যেভাবে বাদী থেকে প্রধান আসামি হলেন বাবুল আক্তার

নতুন সূর্য ডেস্কঃ

স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় বাদী বাবুল আক্তারই হচ্ছেন ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত।ইতোমধ্যে বুধবার বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

পিবিআই জানায়, মিতু হত্যাকাণ্ডের মামলাটি তদন্তে তার স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। কিন্তু মামলার বাদীকে ইচ্ছে করলেই আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা যায় না। 

এদিকে, আগের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে ইতোমধ্যে আদালতে গেছেন পিবিআই’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পরে দায়েরকৃত নতুন হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা চাইলেও কাগজে-কলমে অনেক কিছু বলতে পারি না মামলার তদন্তের স্বার্থে। মিতু হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ আমরা একজনকে দেখেছিলাম তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। কিন্তু মুসা এখনো নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যাতায়াত করতেন। বাবুলের অনুপস্থিতিতে মুসা ঘরের বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে মুসা সোর্স ছিল কিনা। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মুসাকে শুধু বাবুল আক্তারই চিনতেন। ভিডিও ফুটেজ স্পষ্ট এই মুসাকে চেনা গেছে।

কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসার দিকে বাবুল আক্তারের সন্দেহ হচ্ছিল না। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানায়নি।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। আমরা সেটিই বিশ্বাস করেছি। আবার স্ত্রী মিতু নিহতের পর তার যে আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।

তদন্তের স্বার্থে পিবিআই বাবুল আক্তারকে ডেকে ছিল। সাক্ষাতের পর বাবুল আক্তার পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানায় পিবিআই।

পিবিআই প্রধান বলেন, মামলার তদন্তে আমরা নড়াইলের এক লোককে পর্যবেক্ষণে নেই। তার নাম গাজী আল মামুন, তিনি বাবুল আক্তারের বন্ধু। তার অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে।

মামলার তদন্ত সম্পর্কে বনজ কুমার আরও বলেন, ঘটনায় প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন কতোদিন ঝুলে থাকবে এ মামলা? তদন্তে কিছু নতুন প্রশ্ন আসে, সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা ভিন্নদিকে মোড় নেয়।

এদিকে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার নতুন মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।

এর আগে সোমবার (১০ মে) মামলার বাদী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে ডেকে আনা হয় তাকে। মঙ্গলবার (১১ মে) সারাদিন বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানিয়েছেন পিবিআই’র এক কর্মকর্তা।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থান করা মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।