বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের প্রায় দেড় কোটি   টাকা লোপাট
সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের প্রায় দেড় কোটি   টাকা লোপাট

সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট

নতুন সূর্য ডেস্কঃ

সাতক্ষীরায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতাধীন আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আকলিমা খাতুন জানান, তিনি ২০১৪ সালে একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের আওতাধীন সমিতির সদস্য হয়েছেন। প্রতি মাসে সঞ্চয় টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পাননি তিনি। আবার অডিট অফিসার এসে বলে গেছেন তার নামে ১০ হাজার টাকার ঋণ উঠানো হয়েছে। ঋণ নেওয়া সম্পর্কে কিছুই তার জানা নেই।

একই গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, সমিতি কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বৃদ্ধ নাসের সরদার জানান, তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কি ভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হল ? আর কে উঠালো এই টাকা ?
একই এলাকার রিক্তা খাতুন, আহাদ আলী ও মনিরুজ্জামান জানান, তাদের নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। তাদের স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে এই প্রতারকদের কাছে ঋণের টাকা দেয়া হলো ? একটি বাড়ি একটি খামার সরকারি প্রতিষ্ঠান। তার সদস্য বই কেন অফিসের লোকজনদের কাছে থাকবে ? আর এভাবে কেন সদস্যদের নামে টাকা তুলে পকেট ভর্তি করবেন অফিসাররা ?
এসময় আলী হোসেন, হামজের আলী, তৈয়েব আলী, পারভীন খাতুন, হাছিনা খাতুন, নাজমা খাতুন, আবেদা খাতুনসহ অসংখ্যা সদস্য জানান, তারা ঋণ নিয়ে ছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করেছেন। তবে অফিসে জমা হয়নি।
একই অভিযোগ করলেন বাশদহা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন। তার নামে ও তার মায়ের নামে কে বা কারা এই অফিস থেকে ঋণ নিয়েছে যার কোন কিছুই তার জানা নেই। আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসার আসার পরে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন বলে তিনি জানান।
গ্রাহকদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের সদর উপজেলা অফিসের কর্মরত অফিসাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সদস্যদের কাগজ পত্র জালজালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন অসাধু এই অফিসাররা। গ্রাহকের নিকট থেকে সঞ্চয় ও ঋণের টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন তারা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় শুরু হয় একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় আমার বাড়ি, আমার খামার। সরকারী ভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে এই সমিতি। বর্তমানে সদর উপজেলায় এই প্রকল্পে ১২ হাজার সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার সদস্যের টাকা তছনছ করেছে পূর্বের অফিসাররা। অডিট অনুযায়ী ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা খোয়া গেছে প্রকল্পের গ্রাহকদের। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার করেছেন চলতি দায়িত্বে থাকা অফিসার। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান, জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব, সুপার ভাইজার রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেেেছন কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ফৌজদারি মামলার দায়েরের প্রস্তুুতি নিচ্ছে কতৃপক্ষ ।

বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান জানান, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দূর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব জানান, তিনি ৫৩ লাখ টাকার মত নিয়েছেন।এই টাকা বাড়ির কাজে ব্যবহার করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবী করা হচ্ছে । তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার এই প্রকল্পের সিনিয়র অফিসার বিশ্বজিত সরদার জানান, সদর উপজেলার বৈকারি, কুশখালী ও বাঁশদহা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ইতি মধ্যে ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দিয়েছে প্রধান অফিস। তাদের নামে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই টাকা উদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে কিছু এলাকায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।