শনিবার, ৪ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
কয়লা সংকটে বন্ধের পথে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কয়লা সংকটে বন্ধের পথে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

কয়লা সংকটে বন্ধের পথে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

নতুন সূর্য ডেস্কঃ

কয়লা সংকটের কারণে এবার বন্ধের পথে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান-পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এরই মধ্যে কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ মে এই উৎপাদন বন্ধ করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

আশঙ্কা করা হচ্ছে- কয়লার জোগান না হলে এই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপর ইউনিটটি থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরা বরিশাল, খুলনা ও ঢাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডলার সংকটে বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন কয়লা মজুদ আছে। যা দিয়ে আগামী ২ জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু রাখা যাবে। এরপর শিগগিরই কয়লার ব্যবস্থা করতে না পারলে টানা কয়েক সপ্তাহের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকবে। যার প্রভাবে দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে একইভাবে ডলার সংকটের কারণে কয়লা কিনতে না পারায় দুবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।  

পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে দৈনিক প্রায় ৬ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। সে হিসাবে ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হতে আর দেরি নেই। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে এবং ৫০ শতাংশ শেয়ার থাকা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) কেন্দ্রটির কয়লার টাকা দেয়। বিল পরিশোধ করে দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে অর্থ আদায় করে সিএমসি। 

গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিসিপিসিএল জানায়, ছয় মাসের বেশি বকেয়া থাকায় সিএমসি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চিঠিতে বলা হয়, বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত কয়লা সরবরাহ বন্ধ থাকবে। পিডিবি এখনো পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রবিবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন কয়লা মজুদ আছে। যা দিয়ে সর্বোচ্চ ২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন চালানো যাবে। এরপর দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ করে দিতে হবে। 

জানা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রায় ৩০ কোটি ডলার বকেয়া ছিল এবং কয়লা পরিশোধের বিষয়ে পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এখন আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ কোটি ৮ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। এই মাসের মধ্যে আরও ১০ কোটি ডলার পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। এরই মধ্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সেটা আজ-কালের মধ্যে খুললেও কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লাগবে। এতে ২ জুনের পর কয়েক সপ্তাহের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে। 

বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৩৪৪০ মেগাওয়াটের বিপরীতে গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। 

পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান বলেন, কয়লা সংকটে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের পথে। এই পরিস্থিতিতে এলসি খুললেও কয়লা আসতে সময় লাগবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে দেশের বড় একটি অংশে লোডশেডিং করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। গ্রামে লোডশেডিং বেশি করে শহরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ খোরশেদুল আলম বলেন, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বকেয়া ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা এলসি খুলতে পারব। সেক্ষেত্রে আমদানিকৃত কয়লা দেশে আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে। এ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ থাকবে। আশা করব, পিডিবি এই বিদ্যুতের ঘাটতি বিকল্প উপায়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।