বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে শিরোপার লড়াই এখন তুঙ্গে
২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে শিরোপার লড়াই এখন তুঙ্গে

২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে শিরোপার লড়াই এখন তুঙ্গে

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এখন রোদেলা দুপুর। ১০ দলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতি দলের বিরুদ্ধে খেলবে বিধায় প্রথম রাউন্ডে ৪৫ টি খেলা হবে. আজ ২৬ অক্টোবর ইংল্যান্ড শ্রীলংকা খেলা দিয়ে শেষ হবে ৫ম রাউন্ড। পয়েন্টস তালিকার ৪ শীর্ষ্যস্থানীয় দল খেলবে সেমী ফাইনাল। প্রত্যাশা অনুযায়ী আইসিসি ওডিআই রাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা এবং স্বাগতিক ভারত ৫ ম্যাচের প্রতিটি জিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ৫ টি খেলায় ৪ জয় নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে চোকার খ্যাত দুর্দান্ত খেলতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় স্থান সমান পয়েন্টস নিয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ গোলার্ধের প্রান্তিক দেশ নিউজিল্যান্ড। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অতিনাটকীয় কিছু না হলে এই তিনটি দেশ সেমী ফাইনাল খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। চতুর্থ পজিশন নিয়ে এখন হাড্ডা হাড্ডি লড়াই অস্ট্রেলিয়া ,পাকিস্তানের মধ্যে যদিও ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এই মুহূর্তে ৫ খেলায় তিনটি জয় নিয়ে এগিয়ে আছে. আমাদের জন্ম ভূমি বাংলাদেশের টাইগার বাহিনীর অবস্থান এখন ৯ম শুধুমাত্র আইসিসি সহযোগী দল নেদারল্যান্ডসের উপরে। সবচেয়ে স্মরণীয় বিষয় হলো শিরোপা ধারী ইংল্যান্ড এবং বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের শক্তিমান দল ইংল্যান্ডের চার ম্যাচের তিনটি হেরে অনিশ্চিত অবস্থান। মনে হয় না কোনঠাসা অবস্থান থেকে ওরা সেরা চারে জায়গা করে নিতে পারবে।
এবার দশ দলের বিশ্বকাপে দক্ষিণ এশিয়ার আছে ৫ দল। এর মাঝে স্বাগতিক ভারত ছাড়া অন্য চার দলের অবস্থান আদৌ সুবিধাজনক নয়. টুর্নামেন্টের প্রাক্কালে পাকিস্তানকে ফেভারিট মনে হলেও ৫ ম্যাচের তিনটিতে পরাজিত হয়ে অবস্থান ৫ম. শেষ চারে উন্নীত হতে ওদের অবশিষ্ট সব খেলায় জয়ী হতে হবে. ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলংকা আছেই ৭ম স্থানে। জানিনা আজ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ওরা অবস্থান উন্নীত করতে পারবে কিনা। যুদ্ধ বিপর্যস্ত আফগানিস্তান ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ওদের কিন্তু সম্ভাবনা আছে শেষ চারে উন্নীত হবার। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পেলেও বাকি চারটি ম্যাচ হেরেছে শোচনীয় ভাবে বিশাল ব্যাবধানে। নানা কারণে বিতর্কিত বাংলাদেশ দল এখন বিপর্যস্ত। বাকি চারটি খেলা থেকে অন্তত দুটি জয় নিয়ে কিছুটা সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারে কিনা সেটি দেখতে হবে. আইসিসি সহযোগী সদস্যের দেশ নেদারল্যান্ডস শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আলোড়ন তুলেছে।অন্য খেলাগুলোর মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও উড়ে গাছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
এযাবৎ যতটুকু খেলা হয়েছে মনে হচ্ছে ভারতের মাটিতে এবার বিশ্ব কাপ জয়ের সবচেয়ে বড় দাবিদার স্বাগতিক ভারত। দলে রয়েছে রোহিত শামা , বিরাট কোহলির মত বিশ্ব মানের তুখোড় মারকুটে ব্যাটসম্যান। দুজনই আছে আগুনে ফর্মে। সঙ্গে আছে সুবমান গিল, কে এল রাহুল, সূর্যকুমার যাদবের মত উঁচু মানের কার্যকরী ব্যাটিং প্রতিভা। আছে রবীন্দ্র জাদেজা , রবিচন্দ্র অশ্বিনের মত অল রাউন্ডার। তুখোড় অল রাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া আহত হয়ে ছিটকে পড়লেও আছে প্রায় সম্মানের বিকল্প খেলোয়াড়। ওদের বড় শক্তি বুমরা , সামি , সিরাজের মত পেস বোলার , কুলদীপ যাদব, জাদেজা ,অশ্বিনের মত ম্যাচ জয়ী স্পিনার। ভারত দল কিছুক্যাচ মিস করলেও ফিল্ডিং অনেক উন্নত হয়েছে। ভারতের যে কোনো উইকেটে ভালো খেলেই ম্যাচ জয় করার জন্য ভারসাম্য পূর্ণ দল ভারত। ২০১১ সালের পর এবারেই ভারত দলকে অজেয় মনে হচ্ছে।
ভারতের পরেই আমি বিবেচনা করছি সম্ভাবনা দুর্দান্ত খেলতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও দলটি হেরে গেছে পয়েন্টস তালিকার তলানিতে থাকা নেতারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে তবুও মনে করি দলে থাকা বেশ কিছু ম্যাচ উইনারদের অবদানে প্রোটিয়ানরাই পারবে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এবারের টুর্নামেন্টের তিনটি বড় স্কোর ( শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ৪২৮/৫ , ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৯৯/৭ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৮২/৫ ) করেছে ওরা। ওপেনার কুইন্টন ডি কক তিনটি সেঞ্চুরি করে আছে খুনে মেজাজে। রাসি ভ্যান দার ডুসেন , আড্রিয়ান মারক্রাম আছেই ছন্দে , লেট্ মিডল অর্ডারে হেনড্রিক ক্লাসেন এবং ডেভিড হাতের বাট মনে হচ্ছে খোলা তলোয়ার। আগে ব্যাটিং করলে দলটিকে ধরা ছোয়ার মাঝে বেঁধে রাখা দুরূহ মনে হচ্ছে। তবে দলটির চ্যালেঞ্জ ” চোকার” উপাধি ঝেড়ে ফেলা। অবশ্য নেদারল্যান্ডেসের সঙ্গে হেরে সেটি আগে ভাগেই হয়েছে এবার।
সম্ভাবনার সারিতে এরপর উল্লেখ করছি নিউজিল্যান্ডের নাম। বরাবরের মত এবারেও ভালো খেলছে ২০১৫ ,২০১৯ বিশ্ব কাপের ফাইনাল খেলা নিউজিল্যান্ড। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আনফিট থাকা সত্ত্বেও ডেভন কোনওয়ে , উইল ইয়ং ,রাচীন রাভিন্দ্র ড্যারিল মিচেল ব্যাটিং হাল ধরেছে শক্ত হাতে। হেনরি ,বোল্ট ,ফার্গুসন, সান্টনার ভালো বোলিং করে জয় এনে দিচ্ছে নিয়মিত। কেবল মাত্র ভারতের সঙ্গে হেরে যাওয়া দলটি শেষ চারে থাকবে সন্দেহ নেই. কিন্তু কেন উইলিয়ামসনের অবর্তমানে শিরোপা জয় কঠিন হবে ওদের।
এর বাইরে আমি অস্ট্রেলিয়া দলকে এগিয়ে রাখবো। প্রথম দুই ম্যাচে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে করুন ভাবে হেরে যাওয়া দলটি পরের খেলাগুলোতে ছন্দে ফিরেছে। পাঁচ বারের বিশ্ব কাপ চ্যাম্পিয়নরা হয়তো সকল বাধা পেরিয়ে শেষ চারে পৌঁছাবে , ডেভিড ওয়ার্নার , স্টিভ স্মিথ দলের ব্যাটিং কান্ডারী হিসাবে ফর্মে আছে। মার্নাস লেবুচাঙ ,মিচেল মার্শ ভালো খেলছে। দলের এক্স ফ্যাক্টর গেলেন ম্যাক্সওয়েল আছে ছন্দে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট গুলোতে মিচেল স্টার্ক , জোস্ হেজেলউড বা কামিন্স এখনো নিজেদের সুনামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও এডাম জাম্প আছে তুখোড় ফর্মে। জানি ফর্মে ফেরা অস্ট্রেলিয়া দল সব সময় হয়ে উঠে অপ্রতিরুদ্ধ। বর্তমান অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জয় করে নিলে বিস্মিত হব না.
গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান দু বার এবং নেদারল্যাডস একবার অঘটন ঘটিয়েছে। কিন্তু দূর পাল্লার দৌড়ের মত ৯টি ম্যাচ ধারাবাহিক ভাবে খেলার মত শক্তি সামর্থ থাকা দলগুলো এখন শীর্ষে। আমি হতাশ হয়েছি পাকিস্তান , শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের খেলা দেখে। প্রত্যাশা আর প্রপ্তির বিস্তর ব্যাবধান।
সেরা দলটি ভালো খেলে শিরোপা জয় করুক।

লেখাঃ আব্দুস সালেক সুফী,সিনিয়র ক্রীড়া বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক জ্বালানী পরামর্শক

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।