সেলিম খান প্রতিনিধিঃ
শীত আমেজ মানে পিঠা-পায়েস মুখে জল আনা বিভিন্ন রকমের আয়োজন। তার ভিতরে অন্যতম মুখো মিষ্টি কর রসের পিঠা খেজুর রস। প্রতি বছরই শীত আগমনের আগে বেড়ে যায় খেজুর রসের সংগ্রহ। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কদর বেড়ে যায় খেজুর গাছের। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি,আর রস ও গুড়ের নানা শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে আবহমান গ্রাম বাংলায়।
সারাবছর অবহেলিত খেজুর গাছগুলোকে ঝুড়ে নতুন রূপ দেন গাছিরা। সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছগুলোকে প্রস্তুত করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সাতক্ষীরার প্রতিটি উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের গনপতিপুর গ্রামে সরজিমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঝবয়সী মোহাম্মদ দফাদার রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন। ব্যস্ততার মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শীত শুরুর আগেই আমরা নিজের ও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে খেজুরের গাছ লিজ নিয়ে থাকি। এবারও নিয়েছি, রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়ার কাজ শেষ করেছি। ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজও শুরু করেছি। এ বছর শীত একটু দেরিতে পড়ায় দেরিতেই রস সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হয়েছে।’
, ‘আমরা শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করি। সেই গুড় বাজারে বিক্রির টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।’
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা জেলার খেজুরের গুড় দেশের একটি ঐতিহ্য। রস থেকে গুড় তৈরি একটি শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে সাতক্ষীরা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার কয়েকশ’ পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। শীত এলেই সাতক্ষীরায় প্রায় প্রতিটি পরিবারকে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে দেখা যেত। নতুন খেজুরের গুড় আর নতুন ধানের চাল দিয়ে শুরু হতো নবান্ন উৎসব। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এবং খেজুর গুড়ের নামে ভেজাল গুড় তৈরি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি হারাতে বসেছে বলে মনে করেন স্থায়ীরা।