শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা রোগীরা খাবার-ওষুধ কিনতে বাইরে যাচ্ছেন !
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা রোগীরা খাবার-ওষুধ কিনতে বাইরে যাচ্ছেন !

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা রোগীরা খাবার-ওষুধ কিনতে বাইরে যাচ্ছেন !

নিউজ ডেস্কঃ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা হাসপাতালের বাইরে গিয়ে ওষুধ-খাবার কিনছেন। এতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অভিযুক্তরা হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের খাবারও মুখে নেয়ার মতো নয়। খাবার-ওষুধ এনে দেয়ার মতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন লোকজন কিংবা নিজস্ব কোন স্বজন না থাকায় তারা নিজেরাই বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রোগী পাহারা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত চতুর্থ শ্রেনীর জনবল নেই তাদের। করোনা ওয়ার্ড পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ডাক্তারদের পক্ষেও রোগীদের পাহারা দেয়া সম্ভব নয়।

মেডিকেলের সামনের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, করোনা ওয়ার্ডের অনেক রোগী ওষুধ এবং খাবার কিনতে বিভিন্ন দোকানে যায়। তারা যেসব জায়গায় যায় সেখানে করোনা সংক্রামনের আশঙ্কা রয়েছে।

গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ব্যবসায়ীর পরিবারের ৪ সদস্য করোনায় আক্রান্ত। গত রবিবার ঢাকার আইইডিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষার পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই ওইদিন রাতে শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন স্বামী-স্ত্রী এবং এক ছেলে। পরিবারের অপর সদস্য একমাত্র মেয়ের করোনা পজেটিভ হলেও কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ররিবার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত অনেকটা অভুক্ত ছিলেন একই পরিবারের ৩ সদস্য। কারন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা খাবার তাদের মুখে ওঠে না। প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হয়নি হাসপাতাল থেকে। বাধ্য হয়ে গতকাল সকালে করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে খাবার এনে তবেই ক্ষুধার জ্বালা মেটান ওই পরিবারের ৩ সদস্য।

ওই পরিবারের গৃহকত্রী জানান, তার মেয়ের কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে তারা ৩ জনও হাসপাতালে আসতে না। গত রবিবার রাতে হাসপাতালে এসে পড়েছেন চরম সমস্যায়। হাসপাতালের খাবার মুখে নেয়ার মতো নয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হচ্ছে না এখান থেকে। রবিবার রাত থেকে কোন আহার পেটে যায়নি তাদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও এমন কোন লোক নেই যাদের বাইরে পাঠিয়ে খাবার-ওষুধ আনাবেন। বাধ্য হয়ে আজ সোমবার সকালে করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে খাবার এবং ওষুধ আনার কথা মুঠোফোনে স্বীকার করেন তিনি। পরে ডা. মনিষা চক্রবর্তীও তাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানান।

মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা বাকেরগঞ্জের এক রোগীর স্বজন দানিসুর রহমান জানান, তার স্বজন করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকাকালে খাবার এবং ওষুধ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কর্তৃপক্ষের খাবার অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধও হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না। তাই করোনা আক্রান্ত হয়েও ওয়ার্ডের বাইরে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খাবার-ওষুধ কিনতে হয়েছে তাদের।

এভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীরা বাইরের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে করোনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

মেডিকেলের সামনের এক ব্যবসায়ী বলেন, তাদের দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, সেটা তাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তারা সবার কাছে পন্য বিক্রি করেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কেউ দোকানে এলে তার সংস্পর্শে আরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা যাতে ওয়ার্ডের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারী করা উচিত।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার-ওষুধ এনে দেয়ার লোক দরকার হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশের কোন হাসপাতালের রোগী পুলিশ পাহাড়া দেয়ার নজির নেই। বরিশাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাদের লোক দিয়ে করোনা ওয়ার্ড পাহাড়া দিতে পারে। প্রয়োজনে করোনা ওয়ার্ডের গেট তালাবদ্ধ করে রাখতে পারে। হাসপাতালের রোগী পাহাড়া দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয় বলে ওসি জানান।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।