বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
গানম্যান পাচ্ছেন ইউএনওরা: সার্বক্ষণিক গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশ আনসারদের
গানম্যান পাচ্ছেন ইউএনওরা: সার্বক্ষণিক গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশ আনসারদের

গানম্যান পাচ্ছেন ইউএনওরা: সার্বক্ষণিক গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশ আনসারদের

নতুন সূর্য ডেস্কঃ

দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিনে সরকারি দপ্তর ও স্থাপনায় একাধিক হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারদের (এসিল্যান্ড, ভূমি) জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি  তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের জন্য ব্যারাক ও সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পর দেশের ৪৯২টি উপজেলায় চারজন করে মোট এক হাজার ৯৬৪ জন সশস্ত্র অঙ্গীভূত আনসার মোতায়েন করা হয়। এবার ইউএনওদের শারীরিক নিরাপত্তায় একজন পুলিশ (গানম্যান) এবং তাদের বাসভবনের নিরাপত্তায় তিন শিফটে ছয়জন করে ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে ব্যারাক নির্মাণ করা হবে। এতে আনসার সদস্যরা থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের সুবিধা পাবে। উপজেলা পরিষদের প্রত্যেক কর্মকর্তার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব আনসার সদস্যের বেতন-ভাতা ইউএনও কার্যালয় থেকে পরিশোধের জন্য গত ১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ইউএনওদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা থাকা-খাওয়াসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। তাদের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য স¤প্রতি একটি পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনী। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ২৯ মার্চ প্রত্যেক ইউএনওর বাসভবনে আনসার বাহিনীর সদস্যদের জন্য ব্যারাক ও সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের অনুমোদন দেয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সম্প্রতি হেফাজতের কর্মীরা ইউএনওদের বাসভবনে আক্রমণ করেছে। তাই এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে সংশ্নিষ্টদের বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা থানায় হামলা করছে। আবার ইউএনওর বাসভবন থেকে অনেক থানা দূরে হওয়ায় পুলিশ দ্রুত আসতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে আনসার সদস্যদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ইউএনওদের বলা হয়েছে। ইউএনওদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার ও গানম্যান মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ বলেন, কিছু লোক তাদের খারাপ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকারি পুরনো রেকর্ড নষ্টের চেষ্টা করছে। এসিল্যান্ডদের অফিস জনগণের ভূমি-সংক্রান্ত কাগজ সংরক্ষণ করে। এগুলো পুড়ে গেলে বা নষ্ট করা হলে জনগণের ক্ষতি হয়। এ জন্য তারা ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের অফিসে হামলা করছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাই তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানসহ উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে বসবাসকারী সব কর্মকর্তার বাসস্থান ও অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জন্য ইউএনওর সার্বক্ষণিক গানম্যান হিসেবে একজন পুলিশ সদস্য, ইউএনওর বাসভবন নিরাপত্তায় দু’জন করে তিন শিফটে ছয়জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ ও তিনজন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে তিন শিফটে মোট ১২ জন মোতায়েন করা হবে।
নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক গ্র“পে গত মঙ্গলবার একটি পোস্ট দেন সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের অনুরোধ, তারা যেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সার্বক্ষণিক অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো হেলাফেলা কাম্য নয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের একাধিক ইউএনও বলেন, সা¤প্রতিক ঘটনায় তারা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার আলোকে তারা আনসার সদস্যদের সার্বক্ষণিক অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা অঙ্গীভূত আনসার হওয়ায় দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে পারছেন না। এ জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।
হেফাজতের কর্মসূচি চলাকালে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, থানা, ফাঁড়ি, ভূমি কার্যালয়সহ ৩১টি সরকারি ও আধা-সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।