শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আজ মহান মে দিবস
আজ মহান মে দিবস

আজ মহান মে দিবস

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের তাবৎ দেশ আজ আতঙ্ক ও দিশেহারা গ্রহের বাসিন্দা। পৃথিবীর যে শতাধিক রাষ্ট্র খুব গুরুত্বের সঙ্গে মহান মে দিবস পালন করে তাঁরাও আজ শঙ্কিত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই দিনটিকে লেবার ডে বা ওয়ার্কার্স ডে হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। অসংখ্য দেশে এই দিনটিতে ছুটি থাকে। মে দিবস শ্রমিকদের দাবি আদায় করার সংগ্রামে প্রাণ বিসর্জনের স্মৃতিকে সম্মান দেখানোর দিন। এ দিন একজন শ্রমিক উন্নততর জীবনের স্বপ্ন দেখে। কারণ মে দিবস সমগ্র বিশ্বকে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত একটি সমাজ উপহার দিয়েছে। কিন্তু করোনা কবলিত বিশ্বে লকডাউন, আইসোলেশন ও সামাজিক দূরত্ব শ্রমজীবী মানুষের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছে। ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উন্নত দেশগুলোতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব।
পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সেই তুলনায় মেহনতি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশের ৫০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক শহরকেন্দ্রিক (যদিও এদেশের শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ শহুরে-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে), এছাড়া আছে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ এবং কৃষিখাতে জড়িত বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এসব স্বল্প আয়ের মানুষকে করোনা থেকে রক্ষা করা যেমন জরুরি তেমনি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য তাদের কাজে লাগানোও প্রয়োজন। তাছাড়া চিকিৎসা সেবাখাতে শ্রমজীবী নারী-পুরুষের চাহিদা বর্তমান সংকটে অনেক বেশি। চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার করোনা মোকাবিলায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। অর্থাৎ সংকটময় মুহূর্তে চিকিৎসাসেবায় শ্রমজীবী মানুষের গুরুত্ব অপরিসীম। এদিক থেকে এবারের মে দিবস আলাদা তাৎপর্য বহন করছে। এ জন্য ২০২১ সালে স্লোগান হওয়া দরকার- ‘বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে দেশ’।


মহান মে দিবসের রক্তাক্ত ইতিহাস উনিশ শতকের অন্যতম ঐতিহাসিক ঘটনা। ঘটনাটি আমেরিকার শিকাগো শহরের কিন্তু পর্যায়ক্রমে তার প্রতিক্রিয়া সারা বিশ্বব্যাপী প্রসারিত। ১৮৮৬ সালে শিকাগো শহরে প্রায় ৪ লক্ষ শ্রমিক বিভিন্ন কলকারখানায় কাজ করত। ‘হে মার্কেট’র শ্রমিকরা কাজের সময় ১৬ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা আর উপযুক্ত মজুরি আদায়ের দাবি নিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। ১ মে থেকেই তারা তাদের সক্রিয় আন্দোলনকে বাস্তবে রূপদান করা শুরু করে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার স্বীকৃতি দিতে হবে- এই স্লোগান নিয়ে লক্ষাধিক মেহনতি মানুষ একত্রিত হয়।


বাংলাদেশে সব মিলে ৬ কোটি শ্রমিক আছে। এসব শ্রমিকের প্রধান সমস্যা নিপীড়ন, নিখোঁজ ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সমুদ্র মৎস্যখাতে শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি নিখোঁজ হয়। দুর্ঘটনার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, ভবন ধসের ঘটনা, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হয়ে থাকে প্রতিবছর। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতে ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১১ বছরে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিহত হয়েছে। তবে ২০১৮ থেকে শ্রমিকদের অপমৃত্যু বহুলাংশে কমে এসেছে। ১ মে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের জেগে ওঠার দিন। অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের লড়াইয়ের দিন। এটি ঐক্যের দিনও সকল শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার মাধ্যমে উন্নয়নমূখী কাজের জয়যাত্রাকে এগিয়ে নেয়ার শপথ ঘোষণার দিন এটি। ১ মে থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যতে সকল ন্যায্য দাবি আদায়ের মাধ্যমে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। করোনা বিশ্বে শিল্পকারখানার কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বজায় থাকলে কৃষি ও রফতানি খাতে শ্রমজীবী মানুষের অবদান হবে স্মরণীয়।

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।