বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
কলারোয়ায় ঝুঁকির কারণে ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি ঘর
কলারোয়ায় ঝুঁকির কারণে ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি ঘর

কলারোয়ায় ঝুঁকির কারণে ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি ঘর

স্টাফ রিপোর্টার:

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন মানুষদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি ঘর ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের তৈলকুপি গ্রামে পুকুর পাড়ে নির্মিত ১৩টি ঘরের মধ্যে ওই ৭টি ঘর সম্প্রতি সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কলারোয়ার সাবেক ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তার দায়িত্বকালে ও তার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। এসব ঘর নির্মাণে প্রতিটি প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, স্থান নির্বাচনে অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নি¤œ মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, নির্মাণ কাজে অনিয়ম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের তোয়াক্কা না করে হত দরিদ্রদের জন্য এসকল ঘর নির্মাণে স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের দিকে আঙুল উঠলেও অদৃশ্য কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। পুকুরপাড়ে ঝুঁকি থাকলেও ঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি পুকুর ভরাটের জন্য বাড়তি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়। তবুও জীবনহানির আশঙ্কায় হতদরিদ্র ও অসহায়দের জন্য বানানো ওই সব ঘর তাদের বুঝিয়ে দেয়ার আগেই নাজুক পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি সেগুলো ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, তার পূর্ববর্তী ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তা দায়িত্বে থাকাকালীন উক্ত ঘরগুলি নির্মিত হয়। পুকুর পাড়ে নির্মাণ করায় সম্প্রতি ঘরগুলি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সেখান থেকে ৭টি ঘর অন্যত্র সরানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে একটি জায়গা পাওয়ায় ঘরগুলো ভেঙে সেখানে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে সাত জনের নামে এই ঘর বরাদ্দ করা হয়েছিল তারাই নতুন স্থানে নির্মিত ঘর পাবেন। অর্থ অপচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বসবাসকারীদের জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ঘরগুলো সরানো হয়েছে।’
কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, কলারোয়ার সাবেক ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তা তৈলকুপি গ্রামে একটি পুকুর পাড়ে ঘরগুলি নির্মাণ করেন। কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে ব্যাপক দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তিনি ঘরগুলো নির্মাণ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সেজন্য নতুন ইউএনও যোগদানের পর ঘরগুলি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তার লাগামহীন দূর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টি যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান জানান, ‘তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী জেরীন কান্তার সময় উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ১২০টি ঘরের মধ্যে ডিজাইন অনুসরণ না করে ৪০টি জোড়াঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরের কাজ শুরু করার আগেই আমাকে না জানিয়ে ঘর নির্মাণের জন্য রড, বালি, সিমেন্ট, ইট, কাঠ, ঢেউটিন ক্রয় করা হয়। আর এসব তিনি তার কার্যালয় থেকে মিস্ত্রী সুবাসের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ স্থানসমূহে সরবরাহ করতেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে আমি জানতে পেরে, ঐ প্রকল্পের সদস্য-সচিব হিসেবে বাধা প্রদান করি তখন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উপকারভোগী নির্বাচন, স্থান নির্বাচন, লে-আউট প্রদান, মালামাল ক্রয়সহ আপনার কোনকিছু দেখার বা মন্তব্য করার দরকার নেই। তারপরও আমি উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় ও মিস্ত্রী সুবাসের উপস্থিতিতে ডিজাইন অনুযায়ী আলাদা আলাদা করে ঘর নির্মাণ করতে হবে বলা মাত্রই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় স্পষ্ট করে বলে দেন, আপনার কাজ কেবলমাত্র মিস্ত্রী সুবাসের নিকট থেকে কয়টি ঘর নির্মাণ হলো এটা বুঝে নেয়া এবং বিলে স্বাক্ষর করা। এরপর বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মহোদয়কে মৌখিকভাবে কয়েকবার অবহিত করি। এমনকি লিখিতভাবেও জানায়। এর ফলে আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ঘর তদারকি করে প্রতিবেদন জমা দেয়া নিয়ে কারণে অকারণে হয়রানিমূলক শোকজও করেন।’

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।