মো: ইমরান শেখ (চুকনগর) খুলনা :
ধানের পাতা সোনালী রোদে চিকচিক করছে। চারিদিকে সবুজে ভরা। তার মধ্যে আড়াই শতক জমিতে বেগুনী রঙের ধান। সবুজের সাথে পাল্লা দিয়ে সেও বেড়ে চলেছে। দেখলে মনে হবে, পোকার আক্রমণে সারাক্ষেতের ধান বেগুনী হয়ে গেছে, ক্ষেতে বুঝি কোন রোগ লেগেছে। আসলে তা নয়। এটি এক ধরণের জাত, যার পাতা, ধান এবং চালের রঙই বেগুনী। আর ভাত? সেও।
দেশে প্রথমবারের মতো এ জাতের ধান চাষাবাদ করেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দুলালী বেগম। আর তার নামানুসারে এই ধানের নাম করণ করা হয় ‘দুলালী সুন্দরী’ নামে। আর প্রথমবারের মতো খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় এটি চাষাবাদ হওয়ায় এক নজর এই দুলালী সুন্দরীকে দেখতে প্রতিদিন ভীড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ পোজ নিয়ে তুলছেন ছবি। আবার কেউ ধানের গোছ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। দুলালী সুন্দরীকে শেষ পর্যন্ত ঠিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতী-মিকশিমিল এলাকার কৃষক অমল দাশ।
রূদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে শোলগাতী সরদারের মোড় যেতেই চোখে পড়ে এ ক্ষেত। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার মধ্যে মিকশিমিল এলাকার অমল দাশ এবং মিন্টু দাশ নামের দু’জন কৃষক দুলালী সুন্দরী ধান চাষাবাদ করেছেন। এ ধানে গোছা প্রতি ১৮ হতে ২৮টি শিষ ধরে। পাশাপাশি একটি শীষে ১৬০ হতে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান পাওয়া যেতে পারে। আমনের থেকে বোরো মৌসুমে এটির ফলন ভাল পাওয়া যায়।
ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের মিকশিমিল এলাকার কৃষক অমল দাশ জানান, দি স্যালভেশন আর্মি নামের এক প্রতিষ্ঠান থেকে ১কেজি বীজ পাই। তারা আমাকে প্রশিক্ষনও দিয়েছে। আমার জমিতে একখানে আড়াইকাঠা এবং আরেকখানে ৪ কাঠা জমিতে এ ধানের চাষাবাদ করি। তবে ৪ কাঠা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকী আড়াই কাঠার ধান রয়েছে। প্রতিদিন ক্ষেতে অনেক মানুষ আসে। কেউ ছবি তোলে। আবার কেউ কেউ ধানের গোছ তুলে নিয়ে যায়। ক্ষেত রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও আমাকে প্রশিক্ষন দিয়েছে। প্রায় সময় কৃষি অফিস থেকে লোক আসে দেখে যায় আর পরামর্শ দিয়ে যায়। আশা করছি ফলন ভাল হবে।
উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দেবনাথ জানান, নতুন জাতের ধান হওয়ায় সেটি রক্ষা করা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ধানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ অলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমরা নিয়মিত দেখভাল করছি। অনেক কৃষকের মধ্যে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। এ ধানের বীজ সংরক্ষনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দুলালী সুন্দরী জাতের ধান প্রথম বারের মত ডুমুরিয়াতে চাষ হয়েছে। এটি দেখতে বেগুনি হওয়ায় কৃষক আগ্রহ সহকারে এটি চাষ করেছে। ইতোমধ্যে ‘দি স্যালভেশন আর্মি’র সহযোগিতায় তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। মাঠে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে আশাকরি এর থেকে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।