সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
মু’মিন ভাবনায় নববর্ষ
মু’মিন ভাবনায় নববর্ষ

মু’মিন ভাবনায় নববর্ষ

শুকরিয়া মালিকের যিনি জীবনের আরও একটি বছরকে সমাপ্ত করার হায়াত দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।।

ওই মুমিনের হৃদয়ে আনন্দের হিল্লোল বহমান, যে মুমিন গোটা বছরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পেরেছে। সিজদার উৎসব তো সেই মুমিনের জন্য খাস।
যে মুমিন সুস্থতা ও অবসরকে রবের নেয়ামত হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
“نِعْمَتَانِ مَغبونٌ فِيهِمَا كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ”
“এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দুটির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।”

উৎসব মানুষের প্রাণের চাহিদা। আনন্দের খোরাক। ক্লেশ-ক্লান্তি ভুলার উপায়। আমেজে ডুব দিয়ে মনকে সজীব করার মাধ্যম। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম মানুষের জন্য সার্বজনীন উৎসবের ব্যবস্থা করেছে দুই ঈদ প্রবর্তনের মাধ্যমে। এ তো শুধু উৎসব নয়; বরং দুই ঈদকে যারা সুন্নাহ ভিত্তিক উদযাপন করতে পেরেছেন, তারাই উপলব্ধি করেছেন এলাহী উৎসবের শীতলতা কত! কত প্রশান্তিদায়ক!

অথচ হালে দেখা যায়, উৎসব মানে বাদ্য-বাজনার আবশ্যিক ব্যবহার, প্রায় নগ্ন নারীর বাধাহীন মিশ্রণ, তরুণ-তরুণীর বেসামাল কীর্তিকলাপ, উচ্চশব্দে ইবলীসের হাসি ও জম্পেশ আড্ডা, জঙ্গলের হিংস্র হায়নার মত উন্মাদ হয়ে মহাযজ্ঞের সর্বগ্রাসী ধ্বংসাত্মক কর্ম নারী ভোগের মরণ নেশা। এই একটি রাতকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের লক্ষ-কোটি নারীর সতিত্বের শুভ্র আবরণে কলঙ্কের কালিমা লেপন ইত্যাদি। এসব ব্যতীত যেন উৎসব অচল, নিরস, প্রাণহীন।

মুসলিম অভিভাবকের নিকট এতোটুকুই চিন্তার খোরাক যে, এ কথিত উৎসবের অন্তরালে আমি দাইয়ূস হয়ে যাচ্ছি না তো?

দাইয়ূস হলো- যে ব্যক্তি তার পরিবারকে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন-
ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوْثُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তিন ব্যক্তির উপরে জান্নাত হারাম করেছেন; মদ্যপায়ী, পিতামাতার অবাধ্য ও দায়ূছ। যে তার পরিবারে অশ্লীলতাকে স্বীকৃতি দেয়’।
দাইয়ূসী এমন একটি পাপ- যাতে নিজে পাপ করার প্রয়োজন হয় না, অন্যের পাপ দেখে নিরব থাকলেই পাপ অর্জিত হয়।

পরিশেষে বলবো, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতের সাথে সাংঘর্ষিক একটি অনুষ্ঠান। অথচ মুমিন জীবন এলাহী বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে পালনীয় ছিল না, এমন কিছু এ যুগেও পালনীয় হ’তে পারে না। কাজ করার আগেই জবাবদিহিতার চিন্তা করতে হবে। যদি ভুল করে ফেলে, তবে সে তওবা করবে।

বর্ষবরণের এই অপসংস্কৃতির থাবায় পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে জীবনের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে, তা দেখার কেউ নেই। সচেতন মুমিনদের উচিত বর্ষবরণের মতো এমন বেলেল্লাপূর্ণ এবং অর্থ ও সময়ের অপচয় সর্বস্ব অনুষ্ঠান হতে বিরত থাকা। মৌসুমভেদে শীত, খড়া ও বৃষ্টি যাদের জন্য চরম কষ্টের। এ শীতে তারা কেমন আছে? হাড় কাঁপানো এ শীতে বিপন্ন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আজ ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-

“أَيُّمَا مُؤْمِنٍ كَسَا مُؤْمِنًا عَلَى عُرْىٍ كَسَاهُ اللَّهُ مِنْ خُضْرِ الْجَنَّةِ ‏”‏
“যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন”।

আসুন নতুন বছরকে বরণ করি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণের মাধ্যমে, নিশিরাতের তাহাজ্জুদের সেজদায় ক্রন্দনরত দোয়ার মাধ্যমে।
আল্লাহ আমাদের বিবেককে জাগ্রত করুন। নতুন বছর দেশ, জাতি এবং গোটা বিশ্বের সবার জন্য অফুরন্ত কল্যাণের বারিধারা বর্ষণ করুন। আমিন।।এই প্রত্যাশায়।।।

প্রভাষক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ফারুকী
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।