নতুন সূর্য ডেস্কঃ
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গাতিরঘেরি এলাকায় ভাঙা ভেড়িবাঁধ চার দিনেও আটকানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে মেরামতের চেষ্টা চালালেও জোয়ারের পানির তোড়ে তা টিকছে না। ফলে লোকালয়ে অবাধে প্রবেশ করছে লোনা পানি। এ অবস্থায় জলমগ্ন গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাবার সংকট।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ, কয়রা ও শাকবেড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি ৬-৭ ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১১টি স্থানে ভেড়িবাঁধ ভেঙে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরাজীর্ণ বাঁধ টপকিয়ে লোনা পানি লোকালয় প্রবেশ করে। এ সময় জোয়ারের পানিতে ৪০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় নয় পয়েন্ট আটকানো সম্ভব হলেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়েনের গাতিরঘেরী নামকস্থানে বাঁধ মেরামত করা যায়নি। ফলে বৃহস্পতিবার দুপুরের দশহালিয়া ও গাতিরঘেরী বাঁধ দিয়ে জোয়ারে পানি প্রবেশ করে আরও ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। তবে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত হওয়া ভেড়িবাঁধ স্থানে বর্তমানে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, দশালিয়ার ৫টি স্থানে আনুমানিক ২ হাজার ফিট পর্যন্ত ভেড়িবাঁধের ভগ্নদশা তৈরি হয়েছে। এসব ভেড়িবাঁধের স্থানগুলো আটকাতে না পারলে যেকোন সময় উপজেলা পরিষদসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দশালিয়া ভাঙনের প্রায় ৮শ’ ফিট স্থানে রিংবাঁধ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। রিংবাঁধ নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আখম তমিজ উদ্দিন, জিএম মোহসিন রেজা, বাগালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার পাড়, কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহা. হুমায়ুন কবীর, মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মামুন লাভলুসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
বাগালী ইউপি চেয়ারম্যান আঃ ছাত্তার পাড় বলেন, দশহালিয়া ভাঙনের পানিতে বাগালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। লবণ পানির আগ্রাসনে প্লাবিত এলাকার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দশহালিয়া ভেড়িবাঁধ মেরামত না হলে দুর্ভোগ কমবে না। ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদীপ বালা বলেন, প্লাবিত এলাকায় মেডিকেল টিমসেবা প্রদান করছে।
কয়রা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মহসীন রেজা বলেন, মহারাজপুর ইউনিয়নে দশহালিয়া এলাকার বাঁধ মেরামতে স্থানীয়রা রবিবার সকাল থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঁশ, মাটি, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। তবে দুপুরের জোয়ারে তা আবারও তা ভেঙে যায়। সোমবার আবারও চেষ্টা করবে এলাকার মানুষ।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় বাকি ৮টি স্থানের বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে গাতিরঘেরি ও দশহালিয়ায় পানি আটকানো সম্ভব হয়নি।
পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাশিদুর রহমান বলেন, বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে।