শেখ মারুফ হোসেন,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আজ রোববার (১৩ জুন) থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসন। খুলনা জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে গত শুক্রবার তার সম্মেলন কক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। উক্ত সভায় অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন।
কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে থাকছে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিধি মনে দোকান শপিংমল রেস্তোরাঁ ইত্যাদি খোলা রাখা যাবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোন ব্যক্তি ঘরের বাইরে বের হয়ে অযথা ঘোরাঘুরি করবে না। নিবন্ধিত ইজিবাইক অর্ধেক চলাচল করবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। কাচা মাল ঔষধের দোকান সহ জরুরি সেবা এই কঠোর বিধি নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, গত এক সপ্তাহে খুলনার কয়েকটি জায়গায় বিধি নিষেধ আরোপ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ফল পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে সমগ্র খুলনায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করতে না পারলে সংক্রমণের উর্দ্ধগতি ঠেকানো যাবে না। তিনি রাস্তাঘাটে অযথা জটলা করে আড্ডা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালনের জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, খুলনা করোনা রোগীর চিকিৎসার শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হবে। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অতিসত্বর যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সভায় জানানো হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে প্রতিদিন পাঁচশ’ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।
আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গত সাত দিনে দুইশ’ ২৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিন লাখ ৬২ হাজার পাঁচশ’ পঁয়তাল্লিশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
সভায় খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুন্সি মো. মাহবুব আলম সোহাগ, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক আরও বলেন, ‘খুলনা বিভাগের অবস্থা খারাপ। সাত দিনের যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল তাতে তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে কেউ রেহাই পাবো না।’
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মাদ ইসমাঈল হোসেন ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ‘সাতক্ষীরার প্রভাব খুলনায় এসে পৌঁছেছে। আম এবং বন্দরের মালামাল আনা নেওযায় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলছে। এখানে সংক্রমণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। যশোরে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে বিধিনিষেধ চলছে। বাগেরহাটের মোংলায়ও বিধিনিষেধ চলছে।’
বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেছেন, ‘খুলনা সদরে করোনা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায়। খালিশপুর ও সোনাডাঙ্গার পরিস্থিতি ভালো।’
গত ৩ জুন থেকে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও জেলার রূপসা থানায় বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। খুলনার করোনা ডেডিকেট হাসপাতালে আইসিইউ থেকে শুরু করে এইচডিইউ এমনকি সাধারণ শয্যা কোথাও ফাঁকা নেই। ১শ’ শয্যার হাসপাতালে রোগী আছেন ১৩০ জন।
উল্লেখ্য, খুলনা জেলায় এ পর্যন্ত ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৯১ জন। জুন মাসের গত ১০ দিনে ৮৬৪ জন আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৮ জুন সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার শনাক্ত হন ১৫৬ জন। যা এ মাসের সর্বোচ্চ।
এদিকে আজ সকাল থেকেই মহানগর ও জেলায় বিধিনিষেধ প্রতিপালনে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।