তাজউদ্দীন আহমদ রিপনঃ
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুল ইসলামসহ সদ্য কারামুক্ত ৪৬ জন নেতাকর্মীকে দলের পক্ষ থেকে গণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (৮সেপ্টেম্বর) বেলা ৪টায় কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল মাঠে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে এ জনসভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিবের সভাপতিত্বে উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে। দেশের ভেতরে-বাইরে যারা কলকাঠি নাড়ছে তারা চায়না দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। কলারোয়া সাতক্ষীরার মানুষ এর প্রমাণ। দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে জনগণের সরকার দরকার। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী খুন, গুম, মামলার শিকার হয়েছে। স্বৈরাচার পালিয়েছে, কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এখনো অর্জিত হয়নি। এজন্য আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে।
তারেক রহমান বলেন, আসুন আমরা দৃঢ় শপথ গ্রহণ করি এই দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
বিএনপির রাজনীতি উন্নয়ন-উৎপাদনের রাজনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলে যেসব সম্ভাবনা আছে, তা সামনে এনে দেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
এসময় তারেক রহমান সাতক্ষীরার আম, চিংড়ি মাছ ও সুন্দরবনের কথা উল্লেখ করেন এবং এখানকার সম্ভাবনাময় পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমার পরিশ্রমের মূল্য তালা-কলারোয়ার মানুষ দিয়েছে, আমি আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ ও ঋণী। খালেদা জিয়ার আমলে আমার অধীনে এই কলারোয়ার উন্নয়ন হয়েছে। তাই আপনাদের থেকে আমাকে কেউ বিছিন্ন করতে পারেনি, আর পারবেওনা। চেয়েছিলাম হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ। সেটি সম্ভব হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর থেকে শেখ হাসিনার নাম বাংলার মাটিতে কেউ রাখবে না। তিনি আরো বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার মামলায় ৭০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগের পরে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার থেকে মুক্তি পেয়েছি।
ছাত্র জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের ফলে আজ দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। তরুণ ছেলেদের জীবনের বিনিময়ে আজ এ নতুন দেশ।
তিনি বলেন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ মুক্ত আন্দোলন, সবশেষ হাসিনা মুক্ত আন্দোলন করেছে এই ছাত্ররা সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যার বিচার সহ এই জালিম সরকারের আমলের সকল অন্যায় অত্যাচারের বিচার হবে। আপনাদের ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে জীবন-মরণ সাক্ষী রেখে এ দেশে পড়ে ছিলাম। আপনাদের ভালোবাসা থেকে আমাকে কেউ ছিন্ন করতে পারেনি।
অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক তামিম আজাদ মেরিনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন, অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান, আইনুল ইসলাম নান্টা, উপজেলা বিএনপি নেতা সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুল ইসলাম, শেখ আব্দুল কাদের বাচ্চু, যুবদলের আহ্বায়ক এম এ হাকিম সবুজ, শেখ শরিফুজ্জামান তুহিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বিকেল চারটায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হলেও দুপুরের আগেই নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হতে থাকেন। বেলা তিনটার মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। পর্যালোচনা করলে প্রায় ১৬ বছর পর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি। এ কারণে নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাস নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় গণসংবর্ধনায় জনস্রোত ছিল চোখে পড়ার মত।