বিএম আলামিন ইসলাম, খুলনা(কয়রা)
খুলনার কয়রা উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-কাবিখা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ(টিআর) প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহার,নতুন নির্মিত রাস্তায় অন্য রাস্তার পুরাতন ইট ব্যবহারসহ নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দের বড় অংশ আত্নসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে মানুষের মাঝে চরম আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামে পিচের রাস্তা থেকে মফিজুলের বাড়ী অভিমুখে রাস্তা ইটের সোলিং দ্বারা নির্মাণ করতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ(টিআর) কর্মসূচির আওতায় দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির পাশে কোন সাইন বোর্ড দেয়া হয়নি। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য দুইশ ফুট। দক্ষিণ দিকের একশ’ ফুটের চওড়া সাড়ে ৫ ফুট আর উত্তর দিকের একশ’ ফুটের চওড়া ৫ ফুট। রাস্তাটি নির্মাণে সর্বোচ্চ চার হাজার ইট ও ছয়শ’ ফুট বালু ব্যবহার করা হয়েছে। সে হিসেবে শ্রমিক খরচসহ সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করেন।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আঃ মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সভাপতি হিসেবে টাকা উত্তোলন করেছি। তবে কাজ আমি করিনি। কাজটি চেয়ারম্যান নিজে করেছেন। আমি টাকা তুলে চেয়ারম্যানের কাছে দেই।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বিভিন্ন সময় এলাকায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। সেগুলো কোন প্রকল্পে দেখানো হয় না। প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে সাশ্রয়কৃত টাকা ঐ সকল স্থানের উন্নয়ন ব্যয়ের সাথে সমন্বয় করা হয়।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মোল্লাবাড়ি ওয়াপদা থেকে আঃ গফুর মোল্লার বাড়ীর অভিমুখে পাঁচশ’ ফুট রাস্তা ইটের সোলিং দিয়ে নির্মাণ করতে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রাস্তাটি সাড়ে চার ফুট চওড়া।
সরেজমিন সেখানে যেয়ে জানা যায়, কয়েকবছর পূর্বে ইট ও ব্লক দিয়ে পার্শ্ববর্তী ভেড়িবাঁধ পাঁকা করা হয়। সেই বাঁধ পুনরায় উচ্চু করতে ইট ও ব্লক খুলে রাখা হয়েছে। সেই পুরাতন ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ওই মোল্লাবাড়ীর পাশে আরও দুইশ’ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে চার ফুট চওড়া অন্য আর একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কোন রাস্তার পাশে কাজের সাইনবোর্ড নেই। দুটি রাস্তায় বালু, মাটি ও শ্রমিকদের মজুরী বাবদ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। বাকী টাকার বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মনি শংকর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তাটি চেয়ারম্যান করেছেন। তিনি ১ম কিস্তির টাকা উত্তোলন করে চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছেন।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহনেওয়াজ শিকারী ভেড়িবাঁধের পুরাতন ইট ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধের ইট চুরি হয়ে যাচ্ছিল। এজন্য ব্যবহার করেছি। প্রকল্প থেকে সাশ্রয়কৃত টাকা কি করবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করা হবে।
বাগালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মিরেপাড়া কালভার্টের দক্ষিণ পাশের ওসমান সাহেবের বাড়ি থেকে মসজিদ অভিমুখে সাড়ে চারশ’ ফুট দীর্ঘ ও পাঁচ ফুট চওড়া রাস্তার কাজে অতি নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়। কাজটির বরাদ্দ দুই লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মামুনার রশিদ জানতে পেরে অতি নিম্নমানের ইট পরিবর্তন করে ভালো ইট ব্যবহার করার নির্দেশনা দিলে সামান্য কিছু পরিবর্তন করেন।
উত্তর বেদকাশি ৬ নং ওয়ার্ডের পাথরখালীর মোহাম্মদ গাজীর বাড়ি হতে ইকবল গাজীর বাড়ির অভিমুখে রাস্তা ইট দ্বারা নির্মাণের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রাস্তাটি ৭০০ ফুট দীর্ঘ ও ৬ ফুট চওড়া। ওই রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের পুরাতন ইট ব্যবহার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সকল প্রকল্পের কাজে কম-বেশি অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলেও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। অধিকাংশ রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে ভূগর্ভস্থ কাঁদাবালু ব্যবহার করা হয়েছে। মাটির কাজে শ্রমিকের স্থলে ভেকু ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও নগদ অর্থ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় পর্যায়ে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৫ টাকা ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ(টিআর) কর্মসূচির আওতায় দুই কোটি ৮১ লাখ ৩৩ হাজার ১০৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই দুই কর্মসূচির আওতায় ৩০৭ টি প্যাকেজে কাজ চলছে। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ২৭০ মেট্রিক টন চাল ও ২৭০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। জুন মাসের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মামুনার রশিদ বলেন, নতুন রাস্তা নির্মাণে পুরাতন ইট ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন তদারকি করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।