প্রভাষক আসাদুজ্জামান ফারুকী:
করোনার কাছে হেরে গেলেন কলারোয়া থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহা.রাজিব হোসেন।শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না..রাজিউন)। তিনি সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
প্রায় ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।
কলারোয়া থেকে বদলি হয়ে রাজিব সর্বশেষ মাদারিপুরে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ শিশু কন্যা ও ১ শিশুপুত্র রেখে গেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার নিজ বাড়িতে সদ্যপ্রয়াত রাজিব হোসেনের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানা গেছে।
চৌকস পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা মোহা.রাজিব হোসেন ছিরেন অত্যন্ত সদালাপী, জনবান্ধব ও হাস্যউজ্বল ব্যক্তি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দান করেন। সাতক্ষীরা জেলায় প্রথমে কালিগঞ্জে এবং পরে কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে পারিবারিক টানে স্বেচ্ছায় সাতক্ষীরা জেলা ছেড়ে ঢাকার রেঞ্জ হয়ে মাদারীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগ দেন।
কলারোয়া থানায় দায়িত্বপালন কালে মোহা.রজিব হোসেন চেস্টা করেছিলেন কলারোয়া থানাকে বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, হয়রানীমুক্ত ও জনবান্ধব। সমগ্র কলারোয়া উপজেলাকে করেছিলেন শান্তির এলাকা। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উপজেলাবাসী ছিলেন হয়রানীমুক্ত হয়ে সুখে। মানুষের সাথে হেসে ছাড়া কথা বলতেন না। অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন।
কলারোয়া থানার সাবেক ওসি ও তৎকালীন ওসি তদন্ত রাজিব হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলারোয়া থানার ভঙ্গুর জামে মসজিদটি সম্পূর্ণ নতুনরূপে মডেল আকৃতির মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়। কলারোয়ায় পদায়ন অবস্থায় মূলতমূলত কোরআন মজিদ পড়তে শিখেছিলেন রাজিব হোসেন। নামাজ পড়তেন নিয়মিত।
কুষ্টিয়ার ছেলে মোহা. রাজিব হোসেন ও তার সহধর্মীনি মাদারিপুরের মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন, সেখানেই তাদের পরিচয়, পরিনয়, বিয়ে। রাজিব হোসেনের স্ত্রী মাদারিপুর সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকতা করায় সন্তানদের নিয়ে সেখানেই থাকতেন। প্রিয়তমা স্ত্রী আর আদরের সন্তানদের কাছে রাখার বা থাকার জন্যই রাজিব হোসেন স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে যান সেখানে। হন মাদারীপুর ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর। করোনাকালী সময়ে সেখানেই কর্মরত ছিলেন, করোনা জনসচেতনতায় দায়িত্ব পালন করেছেন জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের নির্দেশনা বাস্তবায়নে। শেষমেশ তাকেই হতে হয়েছে করোনা আক্রান্ত। অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত প্রায় ২সপ্তাহ তাকে রাজধানী রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, ছিলেন আইসিইউ’তে। ক্রিটিক্যাল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারলেন না তিঁনি। আল্লাহ’র ডাকে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম জুম্মার দিন ভোরে তাকে চলে যেতে হলো।
মোহা. রাজিব হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহা. মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার), কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, দৈনিক নতুন সূর্য’র সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি আজাদুর রহমান খান চৌধুরী পলাশ, সম্পাদক ও প্রকাশক আরিফুল হক চৌধুরী, ব্যবস্থপনা সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ রিপন, প্রধান বার্তা সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফারুকী, সহ-সম্পাদক মোর্তজা হাসান সহ কলারোয়ার আমজনতা পুলিশ অফিসার রাজিব হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
তারা বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক প্রয়াতের বেহেস্ত নসিব করুন এবং তার পরিবার-পরিজনকে শোক সইবার শক্তি দান করুন, আমীন।’
থানা জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম সাংবাদিক প্রভাষক আসাদুজ্জামান ফারুকী বলেন, ‘কলারোয়া থানা জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণে যাদের অবদানের কথা সারা জীবন মনে থাকবে তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলহাজ্ব শেখ মুনীর-উল-গীয়াস এবং তার সহযোগী ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহা. রাজিব হোসেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৬ এপ্রিল শুক্রবার ভোর বেলায় রাজিব হোসেন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি সৌভাগ্যবান যে সুন্দর মাসে এবং সুন্দর একটা দিনে তার এ চলে যাওয়া। মসজিদ নির্মাণের উসিলায় আল্লাহ তাআলা তার জীবনে ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য আমরা দোয়া করি। ভাবি সহ তার কলিজার টুকরা তিন সন্তানকে আল্লাহতা’লা ছবরে জামিলের তৌফিক দিন। আমিন।’