রবিবার, ৫ মে ২০২৪

সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সেকাল-একাল(১৯৫৩-২০২১)
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সেকাল-একাল(১৯৫৩-২০২১)

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সেকাল-একাল(১৯৫৩-২০২১)

নতুন সূর্য ডেস্কঃ কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা, তাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে, যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে। মুক্তির মন্দির সোপান তলে…লেখা আছে অশ্রুজলে…।-বলছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবগাঁথা ইতিহাসের কথা। উপমহাদেশের প্রাচীন এ রাজনৈতিক দলটি এনে দিয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। শ্বাশত বাঙালির পরিচয় এ দলের মাধ্যমে পেয়েছি। সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত এ নেতাদের ত্যাগ ও আত্মদান আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা যুগিয়েছে বার বার। সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে এ জেলার নেতাদের সংগ্রামী চেতনায় শাণিত হয়েছে আগামীর প্রজন্ম। অতীতের রক্তে রাঙা ইতিহাসের পথ ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ জনগণের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় আমাদের দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের কথা। মুক্তির আকাক্সক্ষায় জ্বলে ওঠা বারুদের যে আলো তারা জ্বেলে গেছেন তা চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। আওয়ামী লীগের গর্বের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আজ তুলে ধরার চেষ্টা করছি সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপট।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকার রোজগার্ডেনে এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের আহ্বান করেছিলেন। এই সম্মেলনে মুসলিমলীগ দল ত্যাগকারী ও অন্যান্য নেতাদের নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

১৯৫২ সালে খুলনায় আওয়ামী মুসলিম লীগের শাখা গঠিত হয়। শেখ আব্দুল আজিজকে সভাপতি ও মোমিনউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে খুলনা জেলা আওয়ামী মুসলিমলীগের কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতে ছিলেন এডভোকেট দেলদার আহমেদ, আলী হাফেজ, এএফএম আব্দুল জলিল, আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, আব্দুল গনি খান, মমতাজ আহমেদ, জিএম ওকালত আলী, আলহাজ্ব কোরবান আলী, কাজী আব্দুল বারি, শহীদুল্লাহ খান, তৈয়েবুর রহমান, এডভোকেট আব্দুস সাত্তার সরদার, আহমদ আলী প্রমুখ।

১৯৫৩ সালে জন্মলাভ করে সাতক্ষীরা আওয়ামী মুসলিমলীগের। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কাজী আজিজুল বারি মোক্তার (কাটিয়) কে সভাপতি ও শহীদুল্লাহ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠিত হয়।

এই কমিটিতে অন্যান্যদের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে জিএম ওকালত আলী (দুদলি), মমতাজ আহমেদ (বোয়ালিয়া), আলহাজ্ব কোরবান আলী (গুমানতলী), শেখ আতিয়ার রহমান (হায়বাতপুর), এডভোকেট আবুল খায়ের (আলিপুর), মুনসুর আলী (ভাতশালা), আব্দুল আজিজ দালাল (পাথরঘাটা), আব্দুল্লাহেল বাকী (বুলারাটি), মুনসুর আলী (ভাদিয়ালি), আতিয়ার রহমান (চন্দনপুর), এডভোকেট তোফাজউদ্দীন (সবজিবাগান, সাতক্ষীরা পৌরসভা), শরীফ আহমেদ (সুলতানপুর), মকবুল হোসেন (কেয়ারগাতি), হায়দার খান চৌধুরী (কুলিয়া), নূর আহমেদ মোল্যা (পলাশপোল), শেখ মরিরউদ্দীন (পলাশপোল), সৈয়দ কামাল বখত্ সাকী (তেঁতুলিয়া, তালা), ইছাহক আলী (নলতা), দেলদার সরদার (পারুলিয়া) অন্যতম।

আওয়ামী মুসলিমলীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ঢাকার সদরঘাট রূপমহল সিনেমাহলে আওয়ামী মুসলিমলীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করা হয়। অধিবেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আওয়ামী মুসলিমলীগের মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়।
১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী মুসলিম লীগের অনেক নেতাকর্মী পুনরায় মুসলিমলীগে ফিরে যান।

১৯৫৬ সালে সাতক্ষীরায় মুসলিমলীগ পুনঃগঠিত হয় এবং প্রতিটি ইউনিয়নে শাখা বিস্তার করে। এসময় আব্দুল বারি খানকে (রসুলপুর) সভাপতি ও আব্দুল গফুর (বাটকেখালি)কে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা মহকুমা মুসলিমলীগের কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আব্দুল্লাহেল বাকী (বুলারাটি), ডা. আব্দুল আহাদ (লাবসা), সাকির আহমেদ (বন্দকাটি), আব্দুল গফ্ফার (কুলিয়া), আব্দুল খালেক মোল্যা (গুমানতলী), হাজী সোহরাব হোসেন (গাবুরা), শামসুর রহমান (যতীন্দ্রনগর), শেখ আয়েনউদ্দীন (ছনকা), নূর আহমেদ খান (পলাশপোল), মোজাহার আলী (পলাশপোল), ছহিলউদ্দীন চৌধুরী (ভালুকা চাঁদপুর), বদরুদ্দোজা চৌধুরী (শ্রীউলা)সহ অনেকেই।
একই বছর খুলনায় দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন বসে। খুলনা মিউনিসিপ্যালিটি হলে এ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে শেখ আব্দুল আব্দুল আজিজ প্রেসিডেন্ট এবং মোমিনউদ্দীন আহমেদ সেক্রেটারি বলে ঘোষিত হলে সম্মেলের সদস্যদের একটি বড় অংশ প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে মোমিনউদ্দিন আহমেদ পরাজিত হন। এতে শেখ আব্দুল আজিজ প্রেসিডেন্ট এবং তফছির উদ্দীন সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।

১৯৫৬ সালের ৪আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার খবরে বলা হয়, ২ আগস্ট এএফএম আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে ৬০ জন ডেলিগেটস’র উপস্থিতিতে এডভোকেট দেলদার আহমেদ (এমসিএ) কে সভাপতি ও তফছির উদ্দীন আহমেদকে সেক্রেটারি করে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে মমতাজ আহমেদ (বোয়ালিয়া), জিএম ওকালত আলী (দুদলি), এ.জি খান (বার এট’ল), শেখ আব্দুল আজিজ, মোমিনউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অন্তর্ভূক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। ওই কমিটিতে গুমানতলীর আলহাজ্ব কোরবান আলী ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর আগে সাতক্ষীরায় এডভোকেট তোফাজউদ্দীনকে সভাপতি, শরীফ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে মহকুমা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটিতে অন্যান্যদের মধ্যে মমতাজ আহমেদ, শেখ আতিয়ার রহমান, নূর মোহাম্মাদ খান (মহৎপুর), জিএম ওকালত আলী, কাজী আজিজুল বারি, শহীদুল্লাহ খান, হাজী কোরবান আলী, এডভোকেট আবুল খায়ের, মুনসুর আলী (ভাতশালা), আতিয়ার রহমান (চন্দনপুর), মুনসুর আলী (ভাদিয়ালী), আতিয়ার রহমান (হায়বাতপুর) প্রমুখ অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
১৯৬৬ সালের ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুলনার মিউনিসিপ্যাল (হাদিস পার্ক) ময়দানে বিশাল জনসভায় ৬ দফার ব্যাখ্যা দেন। এ সভায় ২০ বছরের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। সকলকে ছয় দফার সংগ্রামে একত্রিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। খুলনায় জনসভা করে ফেরার পথে যশোরের কাছে মাগুরায় গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৬ দফার অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তায় সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে। আন্দোলনকে দমন করার জন্য শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ৯মে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ ৭ জুন দেশব্যাপী হরতাল পালন করে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা ওইদিন ঢাকায় ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অসংখ্য মিছিল বের করে। এতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মনুমিয়াসহ ১১জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির প্রায় সকল নেতাসহ ৮০০জনকে আটক করো পুলিশ।

এই আন্দোলেন ঢেউ সাতক্ষীরায় ও লাগে। ছয়দফা আন্দোলনে সাতক্ষীরা শহরে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে মমতাজ আহমেদ, সৈয়দ কামাল বখত্ সাকী, এডভোকেট মুনসুর আহমেদ, এডভোকেট মাহবুবুর রহমান, একেএম কামালউদ্দিন, এডভোকেট এএফএম এন্তাজ আলী, মুনসুর আলী, শেখ আবু নাসিম, মোসলেম উদ্দিন, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল করিম, আলী আহমেদ, কামরুল ইসলাম খান, মোস্তাফিজুর রহমান, আজিবর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
সরকার বাঙালির স্বায়ত্তশাসনেরর দাবি ৬ দফা তথা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে এক মামলা দায়ের করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৮ জনকে আসামী করা হয় মামলায়।
এই মামলায় ১০নং আসামী ছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাঁচরকি গ্রামের রুহুল কুদ্দুস (সিএসপি), ১১নং আসামী ছিলেন তার খালাতো ভাই মোহাম্মদ মহসীন। এছাড়া কলারোয়া উপজেলার হঠাৎগঞ্জ গ্রামের ইপিআর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কারাগারে আটক ছিলেন।

১৯৬৮ সালে তৎকালীন সাতক্ষীরা মহকুমা পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ অঞ্চলে সমাজ বিরোধীদের দমনের জন্য দুর্নীতি দমন সমিতির নামে ‘দরমুজ পার্টি’ গঠন করা হয়। ১৯৬৮ সালে ৪ মে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা ডাকবাংলোর সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আচিমতলা গ্রামের এডভোকেট হাসান আওরঙ্গীর ছেলে খলিলুল্লাহ আওরঙ্গী সেলিম)সহ ৪জন নিহত হয়। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা ঢাকায় মিলিত হয়ে ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলে। এ সংগ্রাম পরিষদ তখনকার শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে যেকোন নির্বাচনে অংশ করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সাতক্ষীরা এলাকার জনগণও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশ নেয়। এসময় সাতক্ষীরায় সভা-সমিতি ও মিছিল হয় এবং সচেতন ছাত্রত্র-জনতা আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে স ম আলাউদ্দীন (মিঠাবাড়ি), সৈয়দ কামাল বখত্ সাকী (তেঁতুলিয়া), এডভোকেট মুনসুর আহমেদ (মুনজিতপুর) এডভোকেট এএফএম এন্তাজ আলী (হিরারচক) মমতাজ আহমেদ (বোয়ালিয়া), বিএম নজরুল ইসলাম (গদখালি), মো. মোসলেম উদ্দীন (তুলসীডাঙ্গা) শেখ আতিয়ার রহমান (হায়বাতপুর), ফজলুল হক (গুমানতলী), গাজী সাঈদুর রহমান (হাড়দ্দহা), খায়রুল আনাম (মাঘুরালি), নূরুল মোমিন (কুলিয়া), লুৎফর রহমান ধোপাডাঙ্গা), আব্দুল মজিদ, নবাব আলী (আশাশুনি), এডভোকেট আব্দুর রহিম (সুশীলগাতি), এডভোকেট শামসুল হক-২ (ঘোনা), নূরুল ইসলাম গাইন (ভুরুলিয়া), একেএম কাজী কামালউদ্দীন (মুনজিতপুর), ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান (কাশিপুর), মহিদুল হক (সুলতানপুর), কামরুল ইসলাম খান (পলাশপোল), মোস্তাফিজুর রহমান (কাটিয়া), আজিবর রহমান (পলাশপোল), সমীর রায় চৌধুরী, আব্দুল ওয়াদুদ (কামালনগর), প্রদীপ কুমার মজুমদার (তালা), এডভোকেট মনসুর আলী (ধলবাড়িয়া প্রমুখ।

১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে সাতক্ষীরায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান গণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। পঞ্চাশের দশক থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সংগ্রামী ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৮ সালে সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হয়। এসময় আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরাতেও পুনরুজ্জীবিত হয়। এডভোকেট মাহবুবুল হককে সভাপতি ও এডভোকেট মুনসুর আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা মহকুমা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।
তারপর ১৯৬৯ সালে মমতাজ আহমেদকে সভাপতি ও সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা মহকুমা আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।

এই মহকুমা কমিটিতে ছিলেন ফজলুল হক (গুমানতলী), শেখ আতিয়ার রহমান (হায়বাতপুর), খায়রুল আনাম (মাঘুরালি), মাস্টার জেহের আলী (মধুসুদনপুর), গাজী সাইদুর রহমান (হাড়দ্দহ), আসাদুর রহমান খান (ভাড়াশিমলা), আব্দুল মজিদ (আশাশুনি), নবাব আলী (আশাশুনি), এডভোকেট মুনসুর আলী (ধলবাড়িয়া), এডভোকেট এএফএম এন্তাজ আলী (হিরারচক) প্রমুখ।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করেন। বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হলে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় সাতক্ষীরাতে আওয়ামী লীগ পুন:গঠিত হয়। সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীকে সভাপতি ও এডভোকেট এএফএম এন্তাজ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা মহকুমা আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ছিলেন স. ম. আলাউদ্দীন (মিঠাবাড়ি), এডভোকেট মুনসুর আহমেদ (মুনজিতপুর), ফজলুল হক (গুমানতলী), মমতাজ আহমেদ (বোয়ালিয়া), এসএম রুহুল আমিন, কাজী কামাল ছট্টুসহ প্রমুখ।

১৯৮০ সালে ফের সৈয়দ কামাল বখ্ত সাকী সভাপতি হন। এসময় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুনসুর আহমেদ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুনসুর আহমেদ। ২০০০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সৈয়দ কামাল বখত সাকী মৃত্যুবরণ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান।
২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। প্রায় ১০ বছর পরে ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন ছাড়াই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। পরে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা ১০ মাস পরে ওই বছর ১১ নভেম্বর মাসে কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে পাঠান। কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কমিটির সহ-সভাপতি হন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকসহ নয়জন, যুগ্ম-সম্পাদক হন আবু আহমেদসহ তিনজন, সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুসহ ৩ জন, অন্যান্য সম্পাদক পদে ২০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ জনসহ ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।

এরপর গত ৮ জানুয়ারি নবীন-প্রবীনদের সমন্বয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরআগে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে পুনরায় মুনসুর আহমেদ সভাপতি ও নজরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় তাদের নাম ঘোষণা করেন কাউন্সিলের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

নতুন কমিটি নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। হাজারো প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের মধ্যে। যাদের ত্যাগ ও আত্মদানের বিনিময়ে আমরা আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি তাদের প্রতি জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা। যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা, মৌন মলিনমুখে জাগালো ভাষা, তাঁদেরি গলে থাকুক আজ রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি। তথ্য সূত্র: সাতক্ষীরা জেলার ইতিহাস ও ইন্টারনেট।

সংগ্রহীত

About The Author

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি থেকে বিরত থাকুন,ধন্যবাদ।